থাইরয়েড এক নিঃশব্দ ঘাতক
- সুস্বাস্থ্য প্রকাশনা
- Mar 2
- 7 min read
রিয়া চক্রবর্তী(অতিথি অধ্যাপিকা, খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগ, উইম্যানস কলেজ কলকাতা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়)


গলার শ্বাসনালীর সামনের দিকে অবস্থিত একটি গ্রন্থিতেই লুকিয়ে জীবনের হাজারো স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপের নিয়ন্ত্রণ। বিপাকক্রিয়া থেকে শুরু করে শিশুর বুদ্ধির বিকাশ, বয়ঃসন্ধির লক্ষণ, মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণের সময় জটিলতা ঠেকানো—এমন অনেক ক্ষেত্রেই থাইরয়েড গ্রন্থি বেশ কিছুটা ভূমিকা পালন করে থাকে।
থাইরয়েড হরমোন দুপ্রকার—টি-থ্রি ও টি-ফোর। রক্তে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় এই হরমোনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু কোনও কারণে এই হরমোনের উপস্থিতির হার বেড়ে বা কমে গেলে সমস্যা শুরু হয়। টিএসএইচ (TSH) আমাদের মস্তিষ্কের ভিতরে অবস্থিত পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় এবং থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তে টি-থ্রি, টি-ফোর হরমোন বেশি মাত্রায় থাকলে টিএসএইচ-এর পরিমাণ কমে যায়।

থাইরয়েডের সমস্যা মূলত দুই ধরনের—হাইপারথাইরয়েডিজম ও হাইপোথাইরয়েডিজম। হাইপারথাইরয়েডিজমে রক্তে থাইরয়েড নিঃসৃত হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে রক্তে থাইরয়েড নিঃসৃত হরমোনের পরিমাণ কমে যায়। থাইরয়েডে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও নেহাত কম নয়। থাইরয়েড গ্রন্থির আলট্রাসাউন্ড, রক্তের এফটি-ফোর এবং টিএসএইচের মাত্রা, অ্যান্টি টিপিও অ্যান্টিবডি, থাইরয়েড স্টিমুলেটিং ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। বংশগত কারণে এই অসুখের শিকার হতে পারেন। এছাড়া জন্ম থেকেই থাইরয়েড গ্রন্থি তৈরি না হওয়া, থাইরয়েডের অপারেশন হলে, কিছু অটো ইমিউন ডিসঅর্ডার থাকলে ও কিছু উৎসেচক ঠিকঠাক কাজ না করলে এই অসুখ হতে পারে।
থাইরয়েড নিঃসৃত হরমোন রক্তে বেশি হলে বা কমলে ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা কমে যায়। ফলে ডায়াবেটিস হতে পারে। তাই অনেক সময় চিকিৎসকরা এই অসুখের সঙ্গে ডায়াবেটিস থেকেও দূরে থাকার পরামর্শ দেন। এই অসুখ যতই আপাত নিরীহ হোক, অবহেলা করলে সমস্যা তো বাড়বেই, উল্টে অন্য অসুখও ধেয়ে আসে। বিশেষ করে রোগীর পারিবারিক ইতিহাসে ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে আরও সাবধান হতে হয়।
থাইরয়েডের সমস্যা কারও কাছেই বিশেষ অপরিচিত নয়। বেশিরভাগ বাড়িতেই কোনও না কোনও মানুষ থাইরয়েডের সমস্যায় ভোগেন। এর থেকেই দেখা দেয় গুরুতর সব অসুখ। সন্তান ধারণের ক্ষেত্রেও বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় থাইরয়েড। সমস্যা থাকলে খাওয়া দাওয়া, জীবনযাপন কড়া নিয়মে বেঁধে দেন চিকিৎসকরা।
থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা বাড়াতে শরীরে যে জিনিসগুলোর মাত্রা বেশি হওয়া প্রয়োজন—জিঙ্ক, আয়োডিন, অ্যালগি, কপার ও আয়রন।

একনজরে কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন
বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকোলি, ছোলা জাতীয় খাবার থাইরয়েড বাড়ায়। এ ছাড়াও সরষে, মুলো, রাঙা আলু, চিনে বাদাম এড়িয়ে চলাই ভালো। থাইরয়েড বেড়ে গেলে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার যেমন পনির, চিজ ডায়েট থেকে বাদ দিন। চিনি, রান্না করা গাজর, পাকা কলা, শুকনো ফল, মধু, ময়দার রুটি, সাদা ভাত, আলু, সাদা পোস্ত, মিষ্টি শরীরে কার্বহাইড্রেটের মাত্রা বাড়ায়। থাইরয়েড থাকলে এগুলোও কম খান। চা, কফি, চকোলেট, সফট ড্রিঙ্কস যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে আদর্শ ডায়েটে যা যা রাখতে হবে
কপার এবং আয়রন দুটোই থাইরয়েডের সমস্যার মোকাবিলা করতে জরুরি। টাটকা মাংস, ওয়েস্টার, কাজু, গমের আটা, কোক—এসবে প্রচুর পরিমাণে কপার রয়েছে। সবুজ শাকসবজি, বিন, আঁশওয়ালা মাছ, সামুদ্রিক মাছ, পোলট্রির ডিমে রয়েছে আয়রন। সেই সঙ্গেই ভিটামিন সি ব্যালান্স করতে খান লেবু, টমেটো, ক্যাপসিকাম। আগে নারকেল বা নারকেলের দুধ থাইরয়েডের সমস্যায় আদর্শ হিসেবে ব্যবহৃত হত। তবে থাইরয়েড বশে রাখতে স্ট্রেস কমানোর প্রয়োজন রয়েছে। তাই থাইরয়েড কমাতে মাথা ঠান্ডা রাখা জরুরি। প্রত্যেকটি মানুষের শরীরে থাইরয়েড বলে একটি গ্রন্থি আছে যা গলার ঠিক ওপরের কোণার অংশে দুদিকে দেখা যায়। এই গ্রন্থি তিন রকমের হরমোন নিঃসরণ করে—ট্রাইআয়ডোথাইরোনিন (T3), থাইরক্সিন (T4) এবং ক্যালসিটোনিন যা আপনার শরীরের নানারকমের কার্যকারিতা যেমন হজমের ক্ষমতা, মস্তিষ্কের কার্যকলাপ, মহিলাদের মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ, হার্টের কার্যকলাপ, ঘুমের চক্র ও ভাবনা চিন্তার কার্যকলাপগুলি সঠিকভাবে চালনা করে। যখনই এই থাইরয়েড গ্রন্থি কোনোরকম সমস্যার শিকার হয়, তখনই থাইরয়েড রোগ ধরা পড়ে। অত্যন্ত গুরুতর এই রোগ বর্তমানে প্রায় 60 শতাংশ মানুষের হয়ে থাকে।
থাইরয়েডের রোগে আহার—কী খাওয়া উচিত ও কী খাওয়া উচিত নয়
থাইরয়েডের চিকিৎসার জন্যে নানারকমের ওষুধ পাওয়া যায়, কিন্তু যেকোনো ওষুধেরই আয়ু খুব কম। কারণ একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে ওষুধ আর কাজ করে না। তাই থাইরয়েডের আসল চিকিৎসা পদ্ধতি অনুযায়ী, ওষুধের থেকেও বেশি কার্যকরী প্রতিদিনের আহার অর্থাৎ খাদ্য তালিকা সঠিক রাখলে ধীরে ধীরে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেকোনো থাইরয়েডের রোগে আক্রান্ত মানুষের জন্যে নির্দিষ্ট ক্যালোরি অনুযায়ী তার খাদ্যতালিকা তৈরি করা হয়। তবে হাইপারথাইরয়েডিজম এবং হাইপোথাইরয়েডিজমের খাদ্যতালিকা সম্পূর্ণ আলাদা। আপেক্ষিকভাবে বলা হয় যে একজন থাইরয়েডে আক্রান্ত মানুষের দিনে 1000 ক্যালোরির বেশি খাদ্য খাওয়া উচিত নয়। এই নিবন্ধে থাইরয়েডের রোগের সঠিক আহার সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করা হল :

হাইপোথাইরয়েড
থাইরয়েড ডায়েট অর্থাৎ থাইরয়েড রোগের খাদ্যতালিকা খুব বেছে বেছে ঠিক করা প্রয়োজন। হাইপোথাইরয়েডে কী খাওয়া উচিত তা নিয়ে কিছু কিছু বিশেষ প্রয়োজনীয় খাদ্যের নাম উল্লেখ করা হচ্ছে যা হাইপোথাইরয়েডে আক্রান্ত মানুষের অবশ্যই খাওয়া উচিত।
আয়োডিন যুক্ত নুন : একজন হাইপোথাইরয়েডে ভোগা মানুষের জন্যে আয়োডিন খুবই প্রয়োজনীয়। আয়োডিনের অভাবে হাইপোথাইরয়েড থেকে গলগণ্ড হতে পারে। কারণ এই সময় শরীর নিজে থেকে আয়োডিন উৎপন্ন করতে পারে না। তাই আপনাকে নিজে থেকে এমন খাদ্য খেতে হবে যা আয়োডিনে ভরপুর। তাই রান্নায় সাধারণ নুন একেবারেই ব্যবহার না করে আয়োডিন যুক্ত নুন খাওয়ার অভ্যেস করুন।
মাছ : মাছে রয়েছে ভরপুর ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড ও সেলেনিয়াম। ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড এল ডি এল কোলেস্টেরলকে কম করতে সাহায্য করে ও সেলেনিয়াম থাইরয়েড হরমোনকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। মাছের মধ্যে রুই, কাতলা, চিংড়ি, টুনা, সার্ডিন, স্যালমন ইত্যাদি খাওয়া খুব উপকারী। তবে মনে রাখবেন, মাছ যেন অতিরিক্ত ভাজা বা রান্না করা না হয়, এতে মাছের আসল গুণ হারিয়ে যায়।

টেংরির সু্প : টেংরি অর্থাৎ খাসির মাংসের হাড় ফুটিযে যে সু্প তৈরি হয় সেটি যেকোনো হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত মানুষের জন্যে খুব উপকারী। এই সময় প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড়ের জোর কম হয়ে আসে। যার ফলে হাড়ের ভঙ্গুরতা দেখা দেয়। তাই এই সময় ক্যালসিয়াম যুক্ত খাদ্য খাওয়া খুবই জরুরি। প্রতিদিন এক বাটি টেংরির সু্পের মধ্যে কয়েকটি সবজি ভালো করে ফুটিয়ে সেটি খাওয়ার অভ্যেস করলে উপকার পাওয়া যায়।
ফল ও সবজি : শাকসবজি এবং ফলে রয়েছে নানারকমের মিনারেল, ভিটামিন,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার। যদিও কিছু কিছু সবজি এদের খাওয়া ঠিক নয়, যেমন—ফুলকপি, মিষ্টি আলু, পালংশাক, বাঁধাকপি, মুলো ইত্যাদি। এগুলিকে গয়ট্রোজেন বলা হয়। তবে এগুলি ভালো করে রান্না করলে গয়ট্রোজেন উপাদানগুলি মরে যায়।
দুগ্ধ পদার্থ যুক্ত খাদ্য : কম ফ্যাট সম্পন্ন দুধ, দই এবং পনিরে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ আয়োডিন এবং সেলেনিয়াম যা থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এছাড়া দুগ্ধজাত পদার্থে থাকা এমিনো অ্যাসিড লাইরোসিন হাইপোথাইরয়েডিজমের নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন বিষণ্ণতা, ক্লান্তি ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করে।
মুরগির মাংস : মুরগির মাংসে রয়েছে প্রয়োজনীয় জিঙ্ক যা হাইপোথাইরয়েডের বিরুদ্ধে কাজ করে ও সেটিকে ট্রাইআয়ডোথাইরোনিন (T3) ও থাইরক্সিনে (T4) রূপান্তর করতে সাহায্য করে। সপ্তাহে অন্তত 3 বার 2 টুকরো করে মাংস খাওয়ার অভ্যেস করলে ভালো।
ডিম : আয়োডিনের একটি সূত্র হল ডিম যা হাইপোথাইরয়েডিজম নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তবে এক্ষেত্রে ডিমের সাদা অংশটিই খাওয়া উচিত এবং কুসুমটি বাদ দেওয়া উচিত। ডিমের কুসুম খেলে কোলেস্টরল বেড়ে যেতে পারে।
শিম শস্য : শিম জাতীয় শস্য বা ডাল হল আয়োডিন ও জিঙ্কে ভরপুর। প্রতিদিন নিয়ম করে ডাল, বিনস, ছোলা, মটরশুটি ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যেস করা ভালো। এতে থাইরয়েড গ্রন্থিগুলি থেকে প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণ হয়।
অলিভ অয়েল : হাইপোথাইরয়েডিজম থাকলে সমস্ত রান্না অলিভ অয়েলে করা ভালো। অলিভ অয়েলে রয়েছে প্রয়োজনীয় ফ্যাট এবং পুষ্টিকর উপাদান যা থাইরয়েড হরমোনগুলিকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। অলিভ অয়েল এলডিএল কোলেস্টরল নামিয়ে ওজন কমাতে ও হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
জল : জল কোনো খাদ্য না হতে পারে, কিন্তু হাইপোথাইরয়েডিজমের জন্যে জলের মতো ওষুধ আর নেই। প্রতিদিন নিয়ম করে 3 থেকে 4 লিটার জল পান করার অভ্যেস করুন। কারণ শরীরের নানা রকমের বিষাক্ত পদার্থ অনায়াসে দূর করা যায় জলের মাধ্যমে। এছাড়া থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ করতে যেসব অঙ্গগুলি সাহায্য করে সেগুলি জলের সাহায্যে কার্যকরী করা যায়।

হাইপোথাইরয়েডে কী খাওয়া উচিত নয়
নীচের এই খাদ্যগুলি হাইপোথাইরয়েডের ক্ষেত্রে একেবারেই খাওয়া উচিত নয় :
কাঁচা অথবা অর্ধেক রান্না করা শাক সবজি, বাঁধাকপি, ব্রকোলি, পালং শাক, ইত্যাদি।
গ্লুটেন যুক্ত খাদ্য।
অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাদ্য।
প্যাকেটজাত খাদ্য বা জাঙ্ক ফুড অথবা তেলে ভাজা খাদ্য যেমন আলুর চিপ্স, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ওয়েফার ইত্যাদি। এগুলির মধ্যে থাকে উচ্চ সোডিয়াম, কিন্তু কোনো আয়োডিন নেই। এছাড়া এতে কোলেস্টরল বেড়ে যায়।
হাইপোথাইরয়েডের ক্ষেত্রে গ্রিন টি পান করা একেবারেই নিষিদ্ধ। কারণ এতে রয়েছে অ্যান্টি থাইরয়েড উপাদান।
হাইপারথাইরয়েড
কখনও কখনও থাইরয়েড গ্রন্থিগুলি একেবারে উল্টোভাবে কাজ করে, অর্থাৎ অতিরিক্ত পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ করে। যাকে বলা হয় হাইপারথাইরযেড। হাইপার থাইরয়ডিজমের ক্ষেত্রে যে যে লক্ষণগুলি সব থেকে বেশি করে ফুটে ওঠে সেগুলি হল ওজন অত্যধিক কমে যাওয়া, উত্তেজনা হওয়া, মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিকের অনিয়ম, চোখ ফুলে যাওয়া, খিদে বেড়ে যাওয়া, ঘুমের অভাব ও ত্বকে সারাক্ষণ ঘাম ঘাম ভাব। এক্ষেত্রে যেসব খাদ্যগুলি সব থেকে বেশি করে খাওয়া উচিত সেগুলি হল :
কাঁচা সবজি ও ফল : কাঁচা ও পাতা সমৃদ্ধ সবুজ শাক ও সবজি খেলে অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ হওয়াকে আটকানো যায়। এর জন্যে যেসব সবজি খাওয়া উচিত সেগুলি হল ব্রকোলি, পালংশাক, বাঁধাকপি, গাজর, ফুলকপি, লেটুস ইত্যাদি। ফলের মধ্যে খাওয়া উচিত কমলা লেবু, আপেল, টমেটো, আঙুর, কিউই, জাম ইত্যাদি।
ব্রাউন রাইস : ব্রাউন রাইস হল উচ্চ গয়ট্রোজেনিক সমৃদ্ধ, যাতে রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেল। প্রতিদিন আধ কাপ থেকে এক কাপ ব্রাউন রাইস খাওয়ার অভ্যেস করা ভালো।
প্রোটিন : প্রোটিন যেমন মুরগির মাংস, মাছ, মাশরুম, সয়াবিন ও ডাল খাওয়া হাইপোথাইরয়েডের ক্ষেত্রে খুবই জরুরি। এসব প্রোটিন অনেকটা দেরিতে হজম হওয়ার ফলে পেট অনেকক্ষণ ভর্তি থাকে।
গ্রিন টি : হাইপারথাইরয়েডে গ্রিন টি হল একটি অনবদ্য ঔষধীয় পানীয় যার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি থাইরয়েড উপাদান ও ফ্লুরাইড। প্রতিদিন অন্তত 2 কাপ করে গ্রিন টি পান করার অভ্যেস করুন।
ঔষধি গাছ : কিছু কিছু ঔষধীয় গুণ সমৃদ্ধ পাতা যেমন ধনে পাতা, অরিগ্যানো, তুলসী পাতা, পুদিনা ইত্যাদি হাইপোথাইরয়েডিজম নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তাই এগুলি রোজ খেলে উপকার পাওয়া যায়।
হাইপারথাইরয়েডে কী খাওয়া উচিত নয়
হাইপারথাইরয়েডে ভুগলে যেই সমস্ত খাদ্যগুলি একেবারেই খাওয়া উচিত নয় সেগুলি হল :
অতিরিক্ত আয়োডিন, জিঙ্ক এবং সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন সামুদ্রিক মাছ, ডিম, নুন, ব্রাজিল বাদাম ইত্যাদি।
কৃত্রিম ভাবে তৈরি মিষ্টি জাতীয় সুইটনার।
দুধ এবং দুগ্ধ পদার্থ যেমন দই, মাখন, পনির, চিজ, ইত্যাদি।
মদ্যপান ত্যাগ করুন এবং যেকোনো বোতলবন্দি পানীয় খাওয়া নিষেধ।
প্যাকেটজাত খাদ্য বা জাঙ্ক ফুড এবং কৃত্রিমভাবে সুগন্ধযুক্ত বা রঙিন খাদ্য।
থাইরয়েড রোগের জন্য আরো কিছু টিপস
যদিও থাইরয়েডের ক্ষেত্রে খাদ্যতালিকা একটি বিশাল ভূমিকা নিয়ে থাকে, তবুও খাদ্যের বাইরেও এমন কিছু নিয়মিত অভ্যেস ও জীবনশৈলী মেনে চলতে হবে যা হাইপোথাইরয়েডিজম এবং হাইপারথাইরয়েডিজম দুটির ক্ষেত্রেই খুব জরুরি। জেনে নেওয়াযাক কি কি করা উচিত ও কী কী করা উচিত নয়।

কী কী করা উচিত
বেশি করে জল পান করুন। জল থাইরয়েডের ক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজনীয় একটি ওষধির কাজ করে। জলের সাহায্যে নানারকমের বিষাক্ত পদার্থ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এছাড়া জল মেদ ঝরাতে ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে। ডায়েটের দিকে খেয়াল রাখুন। একজন থাইরয়েডে আক্রান্ত মানুষের 1000 ক্যালোরির বেশি খাদ্য খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সঠিক খাদ্য তালিকা অর্থাৎ ডায়েট চার্ট বেছে নিয়ে নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করুন। যোগ ব্যয়াম করুন।
থাইরয়েডের রোগে নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি হয়, যার মধ্যে ওজন বৃদ্ধি খুব সাধারণ। নিয়মিত যোগা অথবা ব্যয়াম করা খুবই জরুরি। এতে শরীর সম্পূর্ণভাবে সচল থাকে ও মেজাজ ভাল থাকে। ভালো করে ঘুমোন। দিনে কম করে 8 ঘন্টা ঘুম খুবই জরুরি। না ঘুমোনোর ফলে শরীরে আরো বেশি ক্লান্তি আসে ও সারাদিন অলস লাগে। চিন্তা মুক্ত থাকুন। অতিরিক্ত বিষণ্ণতা বা মানসিক চাপ থেকেও শরীরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে যার ফলে থাইরয়েডের সমস্যা বাড়ে। তাই সব সময় হাসি খুশি ও প্রাণোচ্ছল থাকার চেষ্টা করা দরকার।
কী কী করা উচিত নয়
তৈলাক্ত খাদ্য থেকে দূরে থাকুন। বেশি ভাজা খাবার বা তৈলাক্ত খাবার খেলে থাইরয়েডের সমস্যার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই কম তেলে রান্না করা উচিত, অলিভ অয়েল ব্যবহার করা আরও ভালো। বাইরের খাবার থেকে দূরে থাকুন, ফাস্ট ফুড থাইরয়েডের জন্যে অতিরিক্তবিষাক্ত। কারণ এতে থাইরয়েড উৎপন্ন করা হরমোনগুলি খুব খারাপভাবে বেড়ে যায়। ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করুন। ধূমপান বা মদ্যপান দুটিই হল থাইরয়েডের জন্যে ক্ষতিকারক। নুন কম খান, রান্নায় যেটুকু নুনের প্রয়োজন হয় সেইটুকু ছাড়া পাতে নুন একেবারে না খাওয়া উচিত। প্রয়োজনে রান্নাতেও নুন কম ব্যবহার করতে হবে।
হাইপোথাইরয়েডিজম ও হাইপার-থাইরযেডিজম দুটিই হল খুব গুরুতর সমস্যা যা একেবারেই অবহেলা করা ঠিক নয়। তাই থাইরয়েডের সমস্যা যাতে কোনোদিনও না হয় তার জন্যে আমার আপনার উচিত আজ থেকেই নিজের খাদ্যতালিকা ও জীবনধারার দিকে নজর দেওয়া।
Comments